বুধবার, ২২ মে ২০২৪, ১০:৩৬ অপরাহ্ন

শিগগিরই বাংলাদেশে জারি হবে বিশেষ নির্দেশনা

শিগগিরই বাংলাদেশে জারি হবে বিশেষ নির্দেশনা

স্বদেশ ডেস্ক:

ডেল্টা রূপকে পরাস্ত করে করোনা ভাইরাসের নয়া ধরন ওমিক্রন যেন বিদ্যুৎগতিতে ছড়িয়ে পড়ছে। গত নভেম্বরে দক্ষিণ আফ্রিকায় অতিসংক্রামক এই ধরনটি প্রথম শনাক্ত হওয়ার মাত্র দুই মাসের মধ্যেই এটি ছড়িয়ে পড়েছে অন্তত ৫৩টি দেশে। বিবিসির তথ্যানুযায়ী, যুক্তরাজ্য, ইতালি, জার্মানি ও ফ্রান্সসহ ইউরোপের দেশগুলোতে ক্রমেই মারাত্মক আকার ধারণ করছে সংক্রমণ। ফলে আবারও লকডাউনসহ নানামুখী কঠোর বিধিনিষেধে ফিরছে ওই অঞ্চলের দেশগুলো। ওমিক্রন সংক্রমণের এই ঢেউ ছড়িয়েছে যুক্তরাষ্ট্রেও। দেশটির রোগ নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধ কেন্দ্র বলছে, গত এক সপ্তাহে তাদের ওখানে নতুন শনাক্তদের ৭৩.২ শতাংশই ওমিক্রনে আক্রান্ত। পরিস্থিতি বিশ্লেষণ করে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) বিশ্ববাসীকে ওমিক্রন ঝড়ের জন্য প্রস্তুত হতে বলেছে।

ডব্লিউএইচওর ইউরোপের আঞ্চলিক পরিচালক হ্যান্স ক্লুগ গত মঙ্গলবার ভিয়েনায় এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ইউরোপ, রাশিয়া এবং মধ্য এশিয়ার ৫৩টি দেশে ওমিক্রনের কেস শনাক্ত করা হয়েছে। এটি ডেনমার্ক, পর্তুগাল এবং যুক্তরাজ্যসহ বেশকিছু অঞ্চলে ভয়ঙ্কর হয়ে উঠেছে। বলা যায়Ñ করোনার আরও একটি ঝড় আসছে। ওমিক্রন কয়েক সপ্তাহের মধ্যে আরও শক্তিশালী হয়ে উঠবে এবং চিকিৎসাব্যবস্থাকে হুমকির মুখে ফেলবে। এই অঞ্চলে এখন পর্যন্ত দেখা যাচ্ছে, ২০ থেকে ৩০ বছর বয়সীদের মধ্যে ছড়িয়ে পড়েছে করোনা।

শুধু ইউরোপ নয়, দক্ষিণ এশিয়াতেও করোনা মহামারীর তৃতীয় তরঙ্গের হুমকি তৈরি করেছে ওমিক্রন। এমনিতেই চলতি বছরের শুরুর দিকে করোনার ডেল্টা ধরনের প্রভাবে রেকর্ড সংক্রমণ ও মৃত্যু দেখেছিল দক্ষিণ এশিয়ার মানুষ। ফলে আবার ওমিক্রন ঢেউ আছড়ে পড়লে দেশগুলোর স্বাস্থ্যব্যবস্থা ভেঙে পড়তে পারে বলে আশঙ্কা করছেন অনেকে। ইতোমধ্যে শনাক্ত রোগীর দিক থেকে বিশ্বে দ্বিতীয় অবস্থানে থাকা ভারতে ২১৩ জন ওমিক্রন আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয়েছে। এর মধ্যে রাজধানী দিল্লি ও মহারাষ্ট্রেই রোগীর সংখ্যা সবচেয়ে বেশি।

পরিস্থিতি বিবেচনায় রাজ্যগুলোকে এক চিঠিতে দেশটির কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় একটি বিপদসীমা বেধে দিয়েছে। কেন্দ্র বলছে, যে যে এলাকার পজিটিভিটি রেট ১০ শতাংশের বেশি বা যে এলাকায় আইসিইউ বেডগুলোর ৪০ শতাংশ ভর্তি, সেসব এলাকা বিপদসীমা অতিক্রান্ত করেছে বলে ধরা হবে। এই বিপদসীমা যাতে না পেরোয়, তা নিশ্চিত করতে হবে। প্রয়োজনে রাতে যাতে মানুষ ঘর থেকে বের না হতে পারে, সে জন্য কাউফিউ দেওয়া যেতে পারে। ভারত ছাড়াও দক্ষিণ এশিয়ায় বাংলাদেশ, শ্রীলংকা, পাকিস্তান, মালদ্বীপ, নেপালেও ওমিক্রন আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয়েছে।

আমাদের দেশে ওমিক্রন আক্রান্ত শনাক্ত হলেও একেবারেই সীমিত পর্যায়ে রয়েছে। তবে এতে আত্মতুষ্টিতে ভোগার কোনো সুযোগ নেই বলে উল্লেখ করেছেন জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা। তারা বলছেন, সংক্রমিত হতে হতে এটি বিপজ্জনক হয়ে উঠতে পারে। তাই সব ধরনের সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। কারণ ডেল্টা এবং ওমিক্রন করোনার পৃথক দুটি ধরন। তাদের জিনগত বৈশিষ্ট্যও আলাদা। অন্য যে কোনো ধরনের চেয়ে এর পার্থক্য রয়েছে। ওমিক্রনের সংক্রমণশীলতা অনেক বেশি। এ ছাড়া আগে যারা করোনা সংক্রমিত হয়েছেন বা টিকা নিয়েছেন, তারাও ওমিক্রনে সংক্রমিত হতে পারেন।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, ওমিক্রনের সংক্রমণের বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে হাসপাতালগুলোয় সব ধরনের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। আন্তর্জাতিক বন্দরগুলোয় সাবধানতা অবলম্বনে দেওয়া হয়েছে নির্দেশ। শিগগিরই ওমিক্রন নিয়ন্ত্রণে জারি করা হবে বিশেষ নির্দেশনা। যেখানে বিদেশ থেকে আসা সব নাগরিকের এন্টিজেন পরীক্ষা বাধ্যতামূলক করা হবে।

জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আমাদের দেশে অনেক মানুষ এখনো টিকার আওতায় আসেননি। বয়োজ্যেষ্ঠরা যারা টিকা দেননি, তারা আক্রান্ত হলে ঝুঁকি বাড়বে। যারা টিকা নেননি, তারা যে ভ্যারিয়েন্টেই আক্রান্ত হন না কেনÑ তাদের কিন্তু ঝুঁকি থাকেই। কাজেই কোনোভাবে আমাদের ঝুঁকি নেওয়া যাবে না। এটা ভাবার কিছু নেই যে ওমিক্রনে কিছু হচ্ছে না। কোনো ভ্যারিয়েন্টকেই কম গুরুত্বের সঙ্গে দেখার সুযোগ নেই। টিকা নিতে হবে, স্বাস্থ্যবিধি মানতে হবে। সভা-সমাবেশ এড়িয়ে চলতে হবে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক (রোগ নিয়ন্ত্রণ) অধ্যাপক ডা. নাজমুল ইসলাম বলেন, ওমিক্রন সংক্রমণ মাইল্ড হলেও সেকেন্ডারি ইনফেকশন বাড়তে পারে। এর ক্ষতি করার সক্ষমতা কম। তবে অধিক সংক্রমণশীল হওয়ায় দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। তাই এক্ষেত্রে শিথিলতা প্রদর্শনের সুযোগ নেই। আমাদের সর্বোচ্চ সতর্কতার সাথে থাকতে হবে। অব্যাহত রাখতে হবে সব ধরনের প্রস্তুতি। টিকা কর্মসূচি ও স্বাস্থ্যবিধি কঠোরভাবে মেনে চলতে হবে।

শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিক্যাল কলেজের ভাইরোলজি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. জাহিদুর রহমান বলেন, আমাদের দেশে ওমিক্রন শনাক্ত হলেও এখনো সংক্রমণ নিয়ন্ত্রিত পর্যায়ে রয়েছে। তবে যেসব দেশে ওমিক্রন বেশি শনাক্ত হচ্ছে, সেখানকার সব নাগরিককে পরীক্ষা আওতায় আনা হচ্ছে। অনেক দেশে শনাক্ত রোগী বাড়লেও লক্ষণ ও মৃত্যু বাড়েনি। ডেল্টার ক্ষেত্রে চিত্র ছিল এর সম্পূর্ণ বিপরীত। এ ছাড়া টিকা নেওয়া থাকায়, সংক্রমণ বাড়লেও মৃত্যুতে তেমন কোনো প্রভাব লক্ষ্য করা যাচ্ছে না। আমাদের দেশে এটা এখনো দুশ্চিন্তার কারণ হয়ে না উঠলেও সব প্রস্তুতি গ্রহণ করতে হবে। গুরুত্ব দিতে হবে টিকার বুস্টার ডোজের ওপর।

দয়া করে নিউজটি শেয়ার করুন..

© All rights reserved © 2019 shawdeshnews.Com
Design & Developed BY ThemesBazar.Com
themebashawdesh4547877